রবিউস্সানী
মাসের নফল ইবাদত বা নামায
আরবী
চান্দ্র মাসের ৪র্থ মাস হলো রবিউস্সানী মাস। এর অর্থ হচ্ছে দ্বিতীয় বসন্ত মাস।
প্রথম বসন্ত মাস হলো রবিউল আওয়াল মাস। রবিউস্সানী মাসের ফযীলত এবং বরকত অন্যান্য
মাসের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। এ মাসেও নফল নামায রোযা ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগীতে খুবই
সওয়াব আছে।
আমরা
জাগতিক ব্যাপারে তথা ঘর-সংসার, কাজ-কর্ম, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য,
আহার-বিহারে এত ব্যস্ত ও নিমগ্ন থাকি যে, নফল ইবাদত করা তো দূরের কথা, ফরয-ওয়াজিব
ইবাদতগুলোও অনেক সময় ছুটে যায়। তাই বলে দুনিয়ার পেছনে পড়ে থাকলেই চলবে না; বরং
দুনিয়ার কাজের ফাকেঁ ফাকেঁ নির্দিষ্ট সময়ে দয়াময় আল্লাহ্ তাআলার শাহী দরবারেও
হাজিরা দিতে হবে। আল্লাহ্ প্রদত্ত নেয়ামত উপভোগের শুকরিয়া অবশ্যই আদায় করতে হবে।
নচেত্ এর পরিণতি হবে অতীব ভয়াবহ। অবশ্যই অন্যান্য মাসের মত এ মাসেও আল্লাহ্র ভয়ে
ভীত মো'মীনগণ নফল ইবাদত-বন্দেগীতে কাটিয়ে থাকেন। তাই এ মাসের কয়েকটি নফল ইবাদত
তুলে ধরা হলোঃ
রবিউস্
সানী মাসের নফল নামায
১। কিতাবে
বর্ণিত আছে-রবিউস্সানী মাসের চাঁদ দেখার রাত্রিতে মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে
যে ব্যক্তি দু' দু' রাকাত করে ৮ (আট) রাকাত নামাযের প্রত্যেক প্রথম রাকাতে সূরা
ফাতেহা একবার, সূরা কাউছার ৩ (তিন) বার এবং প্রত্যেক দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহা
একবার ও সূরা এখলাছ ৩ (তিন) বার পাঠ করে, তবে এ নামাযের বদৌলতে দয়াময় আল্লাহ্
তাআলা তাকে অশেষ পূর্ণ দান করবেন আর হাশরের মাঠে জান্নাতীগণের সঙ্গে সামিল করবেন।
তদুপরি এ নামায আদায়কারীর ঈমান সারা বত্সর হেফাজতে থাকবে।
২। আরও
বণির্ত আছে- এ মাসের প্রথম সপ্তাহে কোন ব্যক্তি দু' দু' রাকাত করে ৪ (চার) রাকাত
নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহা একবার ও সূরা এখলাছ ১৫ (পনের) বার করে পড়ে
এবং নামায শেষে নিম্নলিখিত দরূদ শরীফ ১০০০ (এক হাজার) বার পাঠ করে তবে সে আল্লাহ্
তাআলার অশেষ রহমতের অধিকারী হবে। আর যদি দুশমন থেকে থাকে তবে দুশমন পরাজয় বরণ
করবে। দরূদ শরীফটি হলোঃ
اللهم صل
على محمدن النبى الامى الصادق الامين وعلى اله واصحابه وبارك وسلم-
উচ্চারণঃ
আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদিন নিন্নাবিব্যিয়ল উম্মিয়্যিস্ সা-দিকিল আমীণ,
ওয়া আলা আলিহী ওয়া আস্হাবিহী ওয়া বারিক ওয়া সাল্লিম।
৩।
এ মাসের যেকোন বৃহস্পতিবার রাত্রে (বুধবার দিবাগত রাত্রে) এশার নামাযের পর দুনিয়ার
ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে কোন নির্জন স্থানে বসে কোন ব্যক্তি ১০০ (একশত) বার সূরা
মূলক পাঠ করে এবং পাঠান্তে দু'রাকাত নামায এমনিভাবে আদায় করে যার প্রত্যেক রাকাতে
সূরা ফাতেহার পর সূরা এখলাছ ১১ (এগার) বার পাঠ করে তবে আমলকারী আল্লাহ্ তাআলার
দরবারে যে কোন জায়েজ দোয়া করবে; আল্লাহ্ তাআলা তা কবুল করবেন; তদুপরি হাশরের মাঠে
তার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।
৪।
এ মাসের ১৫ (পনের) তারিখের রাত্রে (চৌদ্দই দিবাগত রাত্রে) যে ব্যক্তি ৪ (চার)
রাকাত নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহা একবার ও সূরা এখলাছ তিন বার করে পাঠ
করে, তার আমলনামায় অসংখ্য সওয়াব লেখা হবে।
৫।
এ মাসের শেষ রাত্রে যে ব্যক্তি ৪ (চার) রাকাত নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহা
একবার ও সূরা এখলাছ ৩ (তিন) বার পাঠ করে, সে কবরের আযাব থেকে মুক্তি লাভ করবে।
৬।
এ মাসটি বিশেষ একটি ইবাদতের মাস। তা হলো নবী পাক (সাঃ)-এর চেহলাম অনুষ্ঠিত হবার
মাস। এ মাসের ১১ (এগার) তারিখ অতিক্রান্ত হওয়ার পর ১২ (বার) রবিউস্সানী রাত্রে
(অর্থাত্ ১২ রবিউল আউয়াল থেকে গণনা করে ৩৯ দিনের দিবাগত রাত্রে (চল্লিশা রাত্র)
কোরআনখানী, দোয়া-দরূদ, তসবীহ্-তাহ্লীল, মিলাদ-মাহফিল করে নবী পাক (সাঃ)-এর জীবনী
আলোচনা করা অতিশয় সওয়াবের কাজ। এতদুপলক্ষে গরীব-মিসকীনদিগকে দান খয়রাত ও অন্নভোজের
আয়োজন করাও বিরাট সওয়াবের কাজ।
৭।
রবিউস্সানী মাসের ১১ (এগার) দিবাগত রাত্রে (১২ তারিখ রাত্রে) দু' রাকাত বা চার
চার রাকাত করে ১২ (বার) রাকাত নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহা একবার এবং সূরা
এখলাছ তিন বার করে পাঠ করে ও নামাযান্তে নবী পাক (সাঃ)-এর রূহ মোবারকে এবং
অন্যান্য মো'মীন মুসলমানগণের রূহে সওয়াব রেসানি করে দোয়া ও মুনাজাত করলে নিজের এবং
তাদের মুক্তির আশা করা যেতে পারে। জীবিতদেরও ঈমানের সহিত মৃত্যু হওয়ার আশা করা
যেতে পারে। এ নামায ১১ (এগার) তারিখ দিবাগত রাত্রে এবং ১২ (বার) তারিখ দিবা ভাগেও
আদায় করা যেতে পারে।
******************